নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের মনোনীত এবং স্বতন্ত্র কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী তাদের সংসদীয় আসনে জয়ী হতে পারেননি।
এদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ, জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টির শেরীফা কাদের, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর গণনা শেষে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ঘোষিত ফলাফল অনুসারে এসব তথ্য জানা যায়।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে।
স্থানীয়ভাবে ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘ঈগল’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সুমন পেয়েছেন এক লাখ ৯৮ হাজার ভোট। সেই তুলনায়, আওয়ামী লীগের দুইবারের সংসদ সদস্য মাহবুব আলী পেয়েছেন ৪৭ হাজার ভোট।
ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের তালুকদার মো. তৌহিদ জং (মুরাদ) পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। অন্যদিকে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৬১ ভোট।
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ ‘ঈগল’ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের কাছে হেরেছেন। নৌকা প্রতীকে গোলাপ পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট এবয় তাহমিনা পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট।
পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে পরাজিত হয়েছেন জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। একসময় মঞ্জুর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে কাজ করেছেন মহিউদ্দিন মহারাজ।
আগের নির্বাচনগুলোয় এই আসনে টানা ছয়বার নির্বাচিত হওয়া মঞ্জু, এবারই প্রথম হারলেন। ১৪ দলীয় জোট-শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আওতায়, এই আসনে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়ে মঞ্জুকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ।
২০০১ সালে জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) গঠিত হবার পর থেকে দলটি মাত্র একবারই- ২০১৪ সালে একটির বেশি আসনে জিতেছে। যে নির্বাচন বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল।
রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা।
ফজলে হোসেন বাদশা বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
অন্যদিকে, পেশায় অধ্যাপক শফিকুর রহমান বাদশা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৯০৬ ভোট। ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি ফজলে হোসেন বাদশা। শুরু থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমানের পক্ষে সক্রিয় প্রচার-প্রচারণা চালায়।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেও ঢাকা-১৮ আসনে জিততে পারলেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের।
ওই বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী। তিনি কেটলি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯০৯ ভোট। শেরীফা কাদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৪২৯ টি।
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
দুই উপজেলার মোট ১২৭টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে অনুপম শাহজাহান জয় পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গামছা প্রতীকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট। ফলে ২৮ হাজার ৯০০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন কাদের সিদ্দিকী।
১৪ দলীয় জোটের নেতা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে ভোট করে পরাজিত হয়েছেন।
ফলাফল অনুযায়ী, কুষ্টিয়া-২ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাসানুল হক ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।
Posted by Newsi24