মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বদলির আদেশ হয়েছে। তাকে সরিয়ে নতুন রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বার্তা দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ডেভিড স্লেটন মিলকে বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা যায়। ডেভিড স্লেটন মিলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে এমন এক সময় যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এবং দৃঢ় অবস্থান অনেকটাই টলটলয়মান।
উল্লেখ্য, পিটার ডি হাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০২২ সালে ১৫ মার্চ। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন। আর একারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর এক ধরনের প্রকাশ্য বৈরিতা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে বিএনপি এবং স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাঁর আলাদা অবস্থান এবং পক্ষপাত আওয়ামী লীগকে ক্ষুব্ধ করেছিল। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেছিল। কিন্তু এ সব উপেক্ষা করে পিটার ডি হাস বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছিলেন। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি নাক গলিয়ে ছিলেন এবং বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি রীতিমতো একটি পক্ষ হয়ে গিয়েছিলেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতাদের কাছে ডোনাল্ড লু'র চিঠি নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। যখন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন তিনি ছুটিতে চলে যান। সেই সময় বোঝা যাচ্ছিল যে, পিটার ডি হাসের বাংলাদেশের মিশন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাকে ফিরে যেতে হবে। অবশেষে পিটার ডি হাস ফিরে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাধারণত তিন বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন এবং এই তিন বছর মেয়াদ পূর্তির পরই নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত তিন বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পিটার ডি হাসের আগে যিনি বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত ছিলেন আর্ল আর মিলার তিনি ২৯ নভেম্বর ২০১৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ২১ জানুয়ারি ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মার্শা বার্নিকাট ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব পালন করে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর তাঁর দায়িত্ব শেষ করেন। অর্থাৎ তিন বছরের বেশি সময় তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একইভাবে ড্যান মজিনাও ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৫ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ থেকে দায়িত্ব শেষ করে চলে যান।
অবশ্য কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত তার মেয়াদের কম সময়েও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হ্যারি কে টমাস। যিনি ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে দুই বছরের কম সময়ের আগেই ২০০৫ সালের ২ জুলাই বিদায় নিয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রদূতরা তাদের মেয়াদ পূর্ণ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে পিটার ডি হাস তার মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ পেলেন না। কেন পিটার ডি হাসকে তার মেয়াদ পূর্তির আগেই সরিয়ে নেওয়া হল, এ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।
তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর পরই নির্ধারিত ছিল পিটার ডি হাস আর বাংলাদেশে থাকছেন না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য। বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান এবং নীতি কৌশল ছিল সেটা বাস্তবায়নই ছিল পিটার ডি হাসের প্রধান কাজ। আর এই কারণেই তিনি সরকার বিরোধী একটি প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।
বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করেন যে, পিটার ডি হাস যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই নীতির অংশ। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তার অবস্থান থেকে সরে আসে এবং এখন নির্বাচনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই এই পিটার ডি হাস রাষ্ট্রদূত থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নটা একটা অস্বস্তিতে পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। আর এই বাস্তবতা থেকেই পিটার ডি হাসকে সরিয়ে নেওয়া হল বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন।
Posted by Newsi24