জাপানে রানওয়েতে দুই উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি যাত্রীবাহী ও একটি ত্রাণবাহী উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এতে ত্রাণবাহী উড়োজাহাজের ছয় আরোহীর পাঁচজন নিহত হন। তবে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে থাকা সব আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ৩৭৯ আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করার এই ঘটনা প্রশংসিত হচ্ছে।
জাপানের রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ত্রাণবাহী উড়োজাহাজটি দেশটির কোস্টগার্ডের। এটি ত্রাণ নিয়ে ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল। আগের দিন সোমবার দেশটির মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, জাপান এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির একাংশে আগুন জ্বলছে। আগুনের শিখা উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এই সময় রানওয়েতেও আগুন দেখা যায়। দুর্ঘটনার পরপরই জরুরি বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা উড়োজাহাজ থেকে দ্রুত আরোহীদের নামিয়ে আনেন। যদিও যাত্রীদের ১৪ জন সামান্য আহত হন।
যুক্তরাজ্যের ক্রেনফিল্ড ইউনিভার্সিটির সুরক্ষা ও দুর্ঘটনা বিভাগের একজন অধ্যাপক গ্রাহাম ব্রেথওয়েট। তিনি বলেন, ‘ভিডিওটি আমাকে অবাক করেছে। উড়োজাহাজে এ রকম দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা কঠিন। কিন্তু যখন এয়ারলাইনসটি সম্পর্কে জানলাম এবং জানতে পারলাম যে যাত্রীদের সুরক্ষা ও ক্রুদের প্রশিক্ষণে কতটা শ্রম তারা দিয়েছে, তখন মনে হলো তারা যে কাজটি করেছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
পাইলটস টুগেদার নামে বৈমানিকদের একটি সংগঠনের প্রধান স্টিভেন আর্লরিচ বলেন, ক্রু সদস্যরা যেভাবে উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন, তা উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের উদ্ধারে সময় ছিল মাত্র দেড় মিনিট। আমার মতে, এই সময়ে তাঁরা প্রথম যে কাজটি দ্রুত করেন তা হলো, যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। এরপর সঙ্গে থাকা সব জিনিসপত্র রেখে যাত্রীদের বের করে আনতে পারা।’
স্টিভেন আর্লরিচ উল্লেখ করেন, যাত্রীরা ক্রুদের কথা শুনে জিনিসপত্র রেখে বের হতে শুরু করেন বলেই সবাই জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। কারণ, সাম্প্রতিক এ ধরনের দুর্ঘটনায় দেখা গেছে, দুর্ঘটনার পরও যাত্রীরা তাঁদের জিনিসপত্র নিয়েই বের হতে চান। এটা খুবই আতঙ্কের কথা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীদের বড় একটি শিক্ষা নেওয়ার বিষয় আছে। উড়োজাহাজে উঠলে ক্রুদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ক্রুদের কথা হেলাফেলা করা যাবে না। আর দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ফেলে ক্রুদের নির্দেশমতো কাজ করতে হবে।
ইউরোপের একটি বড় এয়ারলাইনসের একজন বৈমানিক বলেন, ‘উড়োজাহাজটির বৈমানিক, ক্রু ও যাত্রীরা যেভাবে আগুন থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তা আমাকে অভিভূত করেছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কীভাবে উদ্ধারকাজ চালাতে হয়, এ ঘটনা তার নজির হয়ে থাকবে।’
Posted by Newsi24